হুমায়রা কবির
সম্প্রতি রাজধানীতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টারমাইন্ডের ও লেভেলের ছাত্রী আনুশকা নূর আমিন নামে এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। যা আদালতে বিচারাধীন৷
এই ঘটনা সহ বর্তমান সময়ের অনেক ঘটনাতেই আলোচনার শীর্ষে ‘ভিকটিম ব্লেমিং’।
নারী নির্যাতনের ঘটনা মানেই অনলাইন, অফলাইনে একটি কথা, নারীর পোষাক-পরিচ্ছদ ঠিক ছিল তো? নারী সেখানে কেন গেলো? এমন অসংখ্য প্রশ্ন।
কিন্তু প্রকৃত অর্থে ব্যাপারটা কি আদৌ এমন? কেন অপরাধীকে দোষারোপ না করে ভুক্তভোগীকেই ব্লেমিংয়ের শিকার হতে হয়? কোনো ঘটনা ঘটলেই ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করার কালচারটা কিভাবে গড়ে উঠলো?
এই বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এন. এম. রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরনের পরিস্থিতি একদিনে গড়ে উঠেনি বরং এটা দীর্ঘদিনে তৈরি হয়েছে।
নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি, ‘তাহলে এটা একটা হলিস্টিক এ্যাপ্রোচ (একটা ঘটনা অনেকগুলো ঘটনার কম্বিনেশনেই হয়ে থাকে)। অন্যায়কে যখন আমরা অন্যায় মনে করি না বরং সেই অন্যায়টাকে ঢাকা দেওয়াটাই আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠে, ঠিক তখনই ভিক্টিমের উপর দোষারোপ করা শুরু হয়ে যায়।
আবার সেই অন্যায় যারা ঢাকতে চাচ্ছে তারাও কোনো না কোনোভাবে অন্যায়ের সাথে জড়িত। যার ফলে তাদের চোখে বড় অন্যায়টাকেও ছোট বলে মনে হয়।
যখন কেউ দোষ করার পরও দেখতে পায় তার পরিবার তার সাথে আছে, প্রশাসন তার সাথে আছে তখন ভিক্টিমের উপরেই সব দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর সাথে নীতি নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় তো আছেই।
ভিক্টিমকেই দোষারোপ করার কালচার কেন গড়ে উঠলো এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সমাজে আসলে সঠিক আচরণের মূল্যায়ন হয় না, এবং পুরো প্রক্রিয়াতে আমরা নীতি নৈতিকতা বা সঠিক আচরণ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই।
আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ব্যক্তির জায়গা থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা এবং আমাদের জাতীয় জীবনে আমরা অপরাধী এবং অন্যায়কে ধামাচাপা দিয়ে ভিক্টিমকেই দোষারোপ করি।’
ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় নারীদেরকেই দায়ী করা হয়, এর পেছনের কারণ কি এই প্রশ্নের উত্তরে ইউএন উইমেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বললেন, ‘আমাদের সমাজের চিন্তাধারা এবং মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি।
আমরা এখনো চিন্তা করি মেয়েদের সাথে খারাপ কিছু হলে তার জন্য দায়ী সেই মেয়েই।
আমাদেরকে আসলে এই ধারনাগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে, যে কখনোই পোশাক দায়ী না বরং আমাদের চিন্তাধারা দায়ী।
একটা ছেলের যেমন বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, স্বাধীনতা চর্চা করার ইচ্ছা থাকে ঠিক তেমনি একটা মেয়ের ও থাকতে পারে।
কারণ, “অল আর ইকুয়্যাল, অল আর সেইম” মনে করতে হবে। তাই আমাদের সমাজের চিন্তাধারা পরিবর্তন খুবই জরুরি।’
আবার নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার কারণেই নাকি ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো বাড়ছে- এমন বক্তব্যের সাথেও একমত নন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা বাড়ার পেছনে অবাধ মেলামেশা কোন যুক্তিযুক্ত কারণ হতে পারে না। পরিবার এক্ষেত্রে অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে।
পরিবার থেকে অবশ্যই সুশিক্ষা দিতে হবে। কারণ, ছোট থেকেই যদি কেউ তার বাবাকে দেখে তার মায়ের উপর প্রভাব খাটাচ্ছে তখন সে ও বড় হয়ে চাইবে এভাবে প্রভাব খাটাতে।
পরিবার থেকে প্রথম কি কি নৈতিকতা শেখানো হচ্ছে, পরিবার থেকে কোন মানসিকতা চর্চা করা হচ্ছে তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
দিন দিন আমাদের সহ শিক্ষা কার্যক্রম কিন্তু বাড়ছে এবং এটা বাড়বেই। কিন্তু প্রথমে পরিবার থেকেই শিক্ষাটা আসতে হবে।’