পদার্থ বিজ্ঞানে অবদান রাখায় চলতি বছর যে তিন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের একজন সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যানি লুইলিয়ে। নোবেল পাওয়ার খবর জানাতে যখন তাকে ফোন করা হয় তিনি তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন। একাধিকবার ফোন দিয়েও তাঁকে পায়নি নোবেল কমিটি। ক্লাস চলাকালে ফোন ধরেননি তিনি। ক্লাস বিরতিতে নোবেল কতৃপক্ষ অ্যাডাম স্মিথের ফোন রিসিভ করেন অ্যানি। এ সময় অ্যাডাম তাঁর সাথে কথা বলার জন্য সময় চান। অ্যানি তখন বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত, শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়াতে।’
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) নোবেল পুরস্কারের সংবাদ দেয়ার সেই ফোন কলের রেকর্ডটি ফেসবুকে পাবলিশ করেছে নোবেল কর্তৃপক্ষ। যেখানে শোনা যায় অ্যানি ক্লাসের জন্য নিজের ব্যস্ততা প্রকাশ করছেন।
কল রেকর্ডে আরও শোনা যায়, নোবেল কতৃপক্ষ অ্যাডাম তাঁর কাছ থেকে দুই থেকে তিন মিনিট সময় চাইলে তাঁতে সম্মতি দেন অধ্যাপক অ্যানি লুইয়ের। এ সময় অ্যাডাম স্মিথ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সংবাদ দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। প্রতিউত্তরে অ্যানি তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
এরপর অ্যাডাম জানতে চান, খবরটি তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের জানাবেন কি না? অ্যানি তখন বলেন, তাঁদের অবশ্যই জানাবো। আশা করি তাঁরা অনেক খুশি হবে। তবে এখন আমাকে ক্লাসে ফিরতে হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টও দিয়েছে নোবেল কর্তৃপক্ষ। নোবেল প্রাইজ নামক ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে অ্যানি লুইলিয়ের ফোনে কথা বলার একটি ছবি পোস্ট দিয়ে বলা হয়েছে, একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকের গল্প! পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়া অ্যানি এল’হুলিয়ারকে তার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আলাদা করা যায়নি।
এ বিষয়ে অ্যাকাডেমির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, বিজয়ী এ তিন বিজ্ঞানী গবেষণার মাধ্যমে এত সংক্ষিপ্ত আলোর স্পন্দন সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন, যেগুলোকে ‘অ্যাটোসেকেন্ড’ হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সময়ের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পর্যায় এ ‘অ্যাটোসেকেন্ড’। গণিতে দশমিকের পর ১৭টি শূন্যের পর এক দিয়ে এটি লিখতে হয়। এতে স্পষ্ট হয়, প্রায় অকল্পনীয় রকমের সংক্ষিপ্ত স্পন্দন আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এতে ইলেকট্রনের আচরণ বিশ্লেষণ সম্ভব হবে।
১৯০১ সাল থেকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার শুরু হওয়ার পর পঞ্চম মহিলা হিসেবে এই বিশেষ সম্মান পেলেন অ্যানি লুইলিয়ে। তিনি বিবিসিকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার সময় সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের থেকে বেশ কয়েকবার ফোন পাই। ফোন পাওয়ার পর ক্লাস শেষ করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।’ তারপর তিনি বলেন, ‘অভাবনীয় ব্যাপার! এ পুরস্কার পাওয়া নারীদের তালিকা খুব দীর্ঘ নয়। তাই এটা বিশেষ কিছু।’
উল্লেখ্য, রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। মোট পুরস্কারমূল্য (১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা তথা ১০ লাখ মার্কিন ডলার) তাঁদের তিনজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। সাথে দেওয়া হবে সনদ ও একটি স্বর্ণপদকও।
/আসিফ মাহমুদ