MCJ NEWS

মানুষ বদলে যায়, বদলায় না ছবি

ক্যালেন্ডারে সময়টা তখন ১৮৩৭ সাল, লুইস ড্যাগুইর ও নাইসফোর নিপেক ড্যাগুইর টাইপ নামে দুই ব্যক্তি মিলে আবিষ্কার করেন একটি ফটোগ্রাফিক সিস্টেম। যথারীতি তাদের নাম অনুসারে ছবি তোলার এই উপায়ের নাম দেওয়া হয় ড্যাগুইররিয়ো টাইপ ফটোগ্রাফি। আর তখন থেকেই সূচনা হয় ফটোগ্রাফি নামক নতুন এক অধ্যায়ের। ১৮৩৯ সালের ১৯ অগাস্ট ফরাসি সরকার এই দিনটিকে বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ফটোগ্রাফির যাত্রায় যে সকল মানুষ নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে গেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস। একটি ছবি এক হাজার শব্দের প্রতিচ্ছবি। কখনও কখনও বা সেই ছবিটি একটি অসাধারণ গল্পও। বাক্যের পর বাক্য যোজনা করে একটি বিষয় যত সহজে বোঝানো যায় একটি ছবির মাধ্যমে তা আরও সহজ হয়ে যায়। কেননা শব্দের চেয়েও আলোকচিত্র আমাদের হৃদয়কে বেশি স্পর্শ করে। ছবি তোলাটা অনেকের কাছেই শখ। কেউ বা একে বেছে নেন পেশা হিসেবে। শহর থেকে শহরতলী ক্যামেরা হাতে ছুটে বেড়ান অজানা গল্পকে স্থিরচিত্রে বন্দি রাখতে। বর্তমান প্রযুক্তির বিশ্বে চোখের দ্বিতীয় রুপ হয়ে উঠেছে ক্যামেরা। একজন আলোকচিত্রী যখন কোনো সুন্দর দৃশ্য দেখেন তা বিশ্ববাসীকে দেখানোর জন্য তিনি তার দক্ষতা ও ক্যামেরার জাদুতে বন্দী করে ফেলেন।সময়ের স্রোতে তাল মিলিয়ে আমরা এক একটি বছর পার করে দিই। সুন্দর সময় চলে যাওয়ার সাথে চলে যায় আমাদের কাটানো সেই সুন্দর মূহুর্তরাও। আমাদের গোটা জীবনোপন্যাস জুড়ে থাকা সেই ছোটো-বড়ো, প্রধান-অপ্রধান চরিত্রদের আনাগোনা থাকে পরো অ্যালবাম জুড়ে। স্মৃতিচারণের একমাত্র অবলম্বন ফটো-অ্যালবামের এক একটি আলোকচিত্র আমাদের তখন নিয়ে যায় অতীতের সোনালী সময়ে। স্মৃতিকাতরতায় আমরা কখনও হয়ে উঠি প্রচণ্ড উৎফুল্লময় আবার কখনও বা চরম দুঃখবোধের নাবিক। বিশেষ করে জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে যখন প্রচণ্ড একাকিত্ব কাজ করে তখন বস্তু হয়েও ব্যক্তি-সঙ্গের ভূমিকা পালন করে পুরানোদিনের সেই অনুভূতিপ্রবণ ছবিগুলো। তাই আমরা আমাদের সুন্দর মুহুর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে কেউ বা পেশা কিংবা শখের বসে ফটোগ্রাফি করে থাকি।

এমনই শখের বসে ফটোগ্রাফি করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ আবর্তনের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম নিলয়। শখের বশে ছবি তোলা শুরু করলেও বর্তমানে তিনি ফটোগ্রাফি করে বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। ফটোগ্রাফির শুরুটা কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসএসসি পরিক্ষা দেওয়ার পর থেকেই ছবি তোলার প্রতি আমার এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে। যদিও তখন আমার কাছে একটা বাটন ফোন ছিলো। তবে ফটোগ্রাফির জন্য আমার আলাদা ভালো লাগা শুরু হয় বা খুব শখ হিসেবে দাড়ায় মোটামুটি অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে। তখন সামনে যা দেখতাম সেগুলোরই ছবি তুলে রাখতাম। ধীরে ধীরে ফ্রেমিং, সাবজেক্ট, অবজেক্ট জিনিসগুলো ধরতে শিখলাম। এভাবেই আমার ফটোগ্রাফির শুরু।’কুবির আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান জানান, ‘ফটোগ্রাফি আমি শখের বশেই করি। কোথাও ঘুরতে গেলে কিংবা চোখের সামনে ভালো কিছু দেখলে ধারণ করতে ইচ্ছে করে। আমার প্রকৃতির ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। যদি ভবিষ্যৎ চিন্তা বলি, তবে বলবো ভ্রমনে আমার ভীষন আগ্রহ। পাহাড় কিংবা সমুদ্র অথবা গহীন কোনো ঝর্ণা আমায় ভীষণ টানে৷ সৃষ্টিকর্তা সহায় হলে ট্রাভেল ফটোগ্রাফিতে মন দেয়ার ইচ্ছা আছে।’তরিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জীবনে কিছু শখ থাকে আনন্দের, খুশির। আমার কাছে ফটোগ্রাফিও তেমনই একটা শখ। ছবি তুলতে একটা আলাদা পর্যায়ের ভালো লাগা কাজ করে। মাঝে মাঝে এমন হয় কিছু ছবি তুলে আমার নিজেরই ভালো লাগে। চাইনিজ একটা প্রবাদ আছে ‘একটা ছবি এক হাজার শব্দের সমান’। আসলেই সত্যি একটা ছবি অনেক কথা বলে। ফটোগ্রাফি জিনিসটা হল আজকের কোন ঘটনা বা দৃশ্য যা ভবিষ্যতের কাছে একটা বড় স্মৃতি।’সত্যি বলতে ছবির মাধ্যমে আমরা অতীত জগতের শৌখিন পরিব্রাজক হয়ে উঠি। ফটোগ্রাফির নেশা আমাদের অনেক সুন্দর অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কাছে নিয়ে যায়। কখনও কখনও করে তোলে ভ্রমণপিপাসু। প্রকৃতির গহীন বনের জোৎস্নারাত কিংবা পাহাড়ি কোনো ঝর্ণার বুকে সূর্যের দীপ্তিময় কিরণ, অপার্থিব এই সৌন্দর্য চোখে দেখে অভিজ্ঞতালব্ধ করা ও স্থিরচিত্রে বন্দি করার আনন্দ ব্যাখ্যাতীত। হয়তো একারণেই আলোকচিত্র ধারণ অন্যতম নান্দনিক শিল্প হিসেবে পরিগনিত হয়।

এমএ/ আমেনা ইকরা

শেয়ার করুন -