MCJ NEWS

‘আমার জন্মানোর কথা ছিল আশির দশকে, ভুল করে একুশ শতকে এসে পড়েছি’

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে করে তুলে দিও আঙ্গুলের মিহিন সেলাই।’ বর্তমান সময়ে মহাদেব সাহার লেখা কবিতার এই দুটি লাইন আমাদের হৃদয়কে তাড়িত না করলেও একসময় এই চিঠি জুড়ে ছিলো প্রেমিকার অভিমান কিংবা ভালোবাসা, অপেক্ষায় থাকা মায়ের কাছে প্রবাসী ছেলের কত শত না বলা কথা, একাত্তরের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ছেলেটার শেষ স্মৃতি কিংবা অভিমানী বন্ধুর অভিমান ভাঙ্গানোর এক জাদুর কাঠি। অন্তরের খুব কাছের কাউকে মুখে না বলতে পারা কথাগুলোকে সযত্নে সাজিয়ে রাখা হতো চিঠিতে। কখনও এই চিঠি বহুপ্রতীক্ষিত বেকার ছেলেটার জন্য নিয়ে আসতো চাকরির খবর, কখনও বা বিয়ের নিমন্ত্রণ। আবার কখনও এই চিঠি কারো জন্য হতো সর্বনাশী চিঠি।

আজ চিঠি দিবস। চিঠি দিবসে মনে পড়লো বর্তমান ফেলে সেই পেছনের দিনগুলোর কথা। যে সময়টায় নীল কিংবা হলুদ খামে ভরা চিঠির ভাঁজে সুগন্ধি মাখিয়ে কিংবা গোলাপের পাপড়ি গুঁজে ভালোবাসার বার্তা যেতো প্রিয় মানুষটার কাছে। কত আবেগ, ভালোবাসায় টইটুম্বুর থাকতো এক একটা চিঠি।

আজ ১ সেপ্টেম্বর। দিনটি আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস হিসেবে স্বীকৃত। আজকের এই চিঠি দিবসে চিঠি নিয়ে সেই সময়কার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জামান মিলকী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দাপ্তরিক কাজে চিঠির ব্যবহার থাকলেও ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক পর্যায়ে চিঠির ব্যবহার নেই বললেই চলে। কিন্তু আমাদের সময় একেকটা চিঠি ছিলো আমাদের আবেগের জায়গা। ব্যক্তিগতভাবে চিঠির সাথে আমার অনেক আবেগ জড়িত। ডাকপিয়নের কাছ থেকে নিজের নামে চিঠি পেলেই আবেগতাড়িত হতাম। আর আমাদের যেহেতু প্রেমের বিয়ে তাই তখন চিঠিই ছিলো আমাদের একমাত্র ভরসা। এছাড়া বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও চিঠির আদান-প্রদান ছিলো। চিঠি ছাড়াও মানুষ চলতে পারবে এটা তখন ভাবনার মধ্যেও ছিলো না!’

বর্তমান সময়ের যান্ত্রিকতায় হলুদ খামে পাঠানো চিঠির সংখ্যা কমে গেলেও আমরা অনেকেই হয়তো এখনো আমাদের প্রিয় মানুষটার জন্য চিঠি লিখি তবে সে মানুষটার কাছে হয়তো সেই চিঠি কখনো পৌঁছোবেনা। হয়তো সে মানুষটা আকাশের তারা হয়ে জ্বলজ্বল করছে দূরের সেই আকাশটাতে। তাই হয়তো লিখার সময় অশ্রুসিক্ত চোখের দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে চিঠির পাতায়। এমনই এক না পৌঁছানো চিঠির গল্প বললেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আমেনা ইকরা। তিনি বললেন, ‘চিঠি নিয়ে আমার প্রচণ্ড আবেগ। আমার লেখা অধিকাংশ চিঠিই পাঠানো হয়নি, লিখে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। সবচেয়ে বেশি চিঠি লিখেছি বাবাকে, তার মৃত্যুর পর। যখন কাউকে কোনো কিছু বলতে খুব ইচ্ছে হতো বাবাকে চিঠি লিখতাম। উত্তর না পেলেও মন শান্ত হতো। একটা সময় এত পরিমাণ চিঠি লিখেছি যে মনে হতো, আমার বোধহয় আশির দশকে জন্মানোর কথা ছিল, ভুল করে একুশ শতকে এসে পরেছি!’

হয়তো প্রিয়তমাকে কখনো বলা হয়না কালো টিপে তাকে কতটা মানায়। হয়তো বাবাকে ফোন করে বলা হয়না কতটা ভালোবাসি। মাকে ফোন করে বলা হয়না যে মা তোমাকে আমি ভীষন মিস করি। আজকের এই চিঠি দিবসে হৃদয় নিঙ্গড়ানো ভালোবাসায় লিখে ফেলা যাক ভালোবাসাময় সেই ’চিঠি’।

আসিফ/ওয়াফা রিমু

শেয়ার করুন -