চিরাচরিতভাবে শীতকালের জন্য বাঙালির রয়েছে অদম্য প্রেম। প্রায় আট মাসের রৌদ্রদগ্ধ গরম, তাপপ্রবাহ কিংবা অতিবৃষ্টির ক্লান্তি ভুলে শীতের অপেক্ষায় দিন গোনে সবাই। হেমন্তের শেষ বৃষ্টিটাই যেন শীতের আগমনী বার্তা। কিন্তু এ বছর শীত যেন অভিমানী—বিরক্ত হয়ে বলে উঠছে, “আমাকে এত খোঁজার কী দরকার? আসব, যখন ইচ্ছে!”
অক্টোবর শেষ না হতেই হালকা কুয়াশা শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছিল। গত বছরের জানুয়ারির তীব্র শীত ভুলতে পারেনি কেউ, তাই এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বাঙালি। কিন্তু শীত যেন মানুষের রূপ ধরে হেসে বলে উঠলো, “অপেক্ষা কর তোমরা, আমি এবার খুব ক্লান্ত। হিমালয় পাড়ি দিয়ে আসব কি না, তা-ই ভাবছি!”
জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস। এ বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তীব্র শীত অনুভূত হলেও, পরের সপ্তাহ থেকে তা কমতে থাকে। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলেই মানুষের মনে একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে শীতের ভীতি কাজ করে। গত বছরের শীত ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ১২ জানুয়ারি ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন ১৩.৯ ডিগ্রি।

কিন্তু এ বছর শীতের ধরন যেন বদলে গেছে। ২০২৫ সালের একই দিনে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে হয় ২৮ ডিগ্রি, আর সর্বনিম্ন ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর এমন চিত্রের বিপরীতে দেশের সবচেয়ে উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় ২০২৪ সালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ বছর সামান্য বেড়ে ৭.৯ ডিগ্রি হয়েছে।
সুফিয়া কামালের “মাঘের সন্ন্যাসী” এবারও এসেছে বাংলায়, তবে রিক্তহস্তে। মাঘের শীতে বাঘ পালানোর পরিবর্তে এখন সামান্য রোদেই ঘাম ঝরছে। শীত যেন হঠাৎ বদলে যাওয়া মানুষের মতো—গরমের মাঝে দু’-একদিনের উপস্থিতি মাত্র। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ বছর জানুয়ারিতে দেশে তিন থেকে পাঁচটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত মূলত রংপুর, রাজশাহী বিভাগ ও যশোর-কুষ্টিয়া এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ দেখা গেছে। এছাড়া, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও কুড়িগ্রামে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।অন্যদিকে, গত বছর দেশে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার মোট তিনটি শৈত্যপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। অন্যদিকে, দেশের অন্যান্য অঞ্চল ছিল শুষ্ক, আর গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশ যেন ধীরে ধীরে তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে—ঋতুর রং ও বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। অবহেলার ছাপ স্পষ্ট, ২০২৫ সালের শীতকাল যেন বলে গেল, “শীতকাল থাকবে না, থাকবে না শীতকাল!”
/ কাজী ফাহমিদা কানন