একই ঘরে বড় হওয়া, একসঙ্গে স্কুল-কলেজে পড়া, একই বইয়ে চোখ রাখা এভাবেই বেড়ে উঠেছেন যমজ বোন অপর্না শীল ও অর্পিতা শীল। এবার তাদের এই যুগল পথচলায় যোগ হলো নতুন পালক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ভর্তিযুদ্ধে চমক জাগানো সাফল্য।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কুবির স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের (সি ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন অপর্না। তার যমজ বোন অর্পিতা পেয়েছেন ২৬তম স্থান।
নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করা এই দুই বোন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। সীমিত সামর্থ্যের পরিবারে বড় হলেও স্বপ্নের পেছনে ছুটতে কখনও পিছপা হননি। পড়াশোনার প্রতি একাগ্রতা ও পারস্পরিক সহায়তা ছিল তাদের বড় শক্তি।
অপর্না বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই। নির্দিষ্ট কোনো রুটিন না থাকলেও স্যারদের পরামর্শ মেনে চলতাম। হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় ছিল আত্মবিশ্বাস। হতাশা কাটিয়ে মনোযোগ ধরে রাখাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
শুধু কুবি নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখিয়েছেন মেধার ছাপ। অপর্না রাবির ‘বি’ ইউনিটে ১০০তম ও জবির ‘সি’ ইউনিটে ১৫৫তম স্থান পেয়েছেন। অন্যদিকে, অর্পিতা রাবির একই ইউনিটে ১০৪তম।
এই সফলতার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদান মা’র বললেন দুই বোনই। গৃহিণী মা-ই ছিলেন তাদের প্রেরণার বাতিঘর। বাবা প্রবাসে থাকায় সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মা।
‘মা না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না,’ বললেন অপর্না ও অর্পিতা। তিন বোনের মধ্যে তারা দুজনে ছোট। ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষার রাত, উদ্বেগ, আনন্দ, কান্না সবকিছুর ভাগীদার ছিলেন একে অন্যের।
অ্যাকাডেমিক ফলাফলেও রয়েছে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভালোবাসার ছাপ। অপর্না এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। অর্পিতা পেয়েছেন এসএসসিতে জিপিএ-৫, আর এইচএসসিতে ৪.৯২। তবে ভবিষ্যতে পরিকল্পনায় দুজনের রয়েছে ভিন্নতা। অপর্না চান সিএ (চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট) করতে, আর অর্পিতা গড়তে চান করপোরেট ক্যারিয়ার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যখন এই দুই বোন পা রাখবেন, তারা হয়তো হারিয়ে যাবেন হাজারো শিক্ষার্থীর ভিড়ে। কিন্তু তাদের এই সাফল্য বলে হাত ধরে চললে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
এএম /মনিরা শীলা, মাহিদুল ইসলাম রাজিব