‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিশন নিয়ে এসেছি— দুর্নীতিমুক্ত, সুন্দর ও উন্নত একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা। এখানে কোনো দলাদলি থাকবে না, শিক্ষকদের মূল মাপকাঠি হবে গবেষণা।’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ১০১ জনের প্রোফাইল খালি পড়ে আছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। শুধু ক্লাস নেওয়া নয়, একজন শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে গবেষণায় সম্পৃক্ত হওয়া। তিনি আরও বলেন, আমি এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে গবেষণা, স্বচ্ছতা এবং একাডেমিক উৎকর্ষই হবে মূল্যায়নের মূল মানদণ্ড।
বুধবার (২৮ মে) নানা আয়োজনে পালিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে আনন্দ র্যালির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দেওয়া হয় শান্তির বার্তা। র্যালি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে কেক কাটা হয়।
এরপর মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হয় আলোচনা সভা ও প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান।বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমাইয়া আফরিন সানি ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিন বিনতে এনাম সভা পরিচালনা করেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, একজন প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট শাসনের পর এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই দিনটি দেখার জন্য আমাদের একজন শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম প্রাণ দিয়েছেন। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তিনি বলেন, এখন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। তারাই আমাদের মূল শক্তি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘এইবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের মনে এক বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করেছে, যার জন্য দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবদান আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।’
সভাপতির বক্তব্যে ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস গৌরবময়। শুরুর দিকে আমাদের কিছুই ছিল না—মাত্র ১৫ জন শিক্ষক, যাদের কেউ পিএইচডি ছিলেন না। অথচ এখন নিয়মিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পিএইচডির জন্য আবেদন করছেন।
তিনি বলেন, ১৫-১৬ বছর নানা অবহেলার মধ্যেও আমরা এগিয়ে গেছি। আজকের এই মঞ্চ থেকে আমরা অঙ্গীকার করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ২০৩১ সালে একটি নতুন মাইলফলক গড়ব।
/ সাজিদুর রহমান