
খাদ্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন ও রূপান্তরে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) তিন দিনব্যাপী ‘ফুড সিস্টেমস ইয়ুথ লিডারশিপ ট্রেনিং’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)-এর উদ্যোগে এবং ইয়ুথ চেঞ্জ সোসাইটি বাংলাদেশ (ওয়াইসিএসবিডি) ও প্রভাতী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সহযোগিতায় গত ২ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজ্ঞান অনুষদের সেমিনার কক্ষে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।
তিনদিনব্যাপী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা খাদ্য ব্যবস্থার খুঁটিনাটি এবং নেতৃত্ব বিকাশ বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। প্রথম দিনে ছিল নেতৃত্বের যাত্রা, খাদ্য ব্যবস্থার মৌলিক ধারণা ও স্থানীয় বাস্তবতা বিশ্লেষণ। দ্বিতীয় দিনে জাতীয়–আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ায় খাদ্য ব্যবস্থার প্রভাব, নীতিনির্ধারণে তরুণদের ভূমিকা, দাবি আদায়ের কৌশল এবং কার্যকর যোগাযোগ উপস্থাপনা শেখানো হয়। শেষ দিনে যৌথ প্রচারভিযান পরিকল্পনা, সমস্যা বিশ্লেষণ, কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন নিয়ে ধাপভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া। তিনি বলেন, ‘‘যুবসমাজকে কৃষি উদ্যোক্তা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জৈব কৃষি, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এবং নতুন উদ্যোগ বা স্টার্টআপ গড়ে তোলার মতো খাতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই। নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে তরুণরা শুধু নিজেরাই কর্মসংস্থান তৈরি করবে না, বরং সমাজে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখবে। এটি শুধু নিজেদের কর্মসংস্থান নয়, দেশ ও জাতিকেও উপকৃত করবে।’’
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে প্রশিক্ষক এম রাব্বি বলেন, ‘‘বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো নিরাপদ, টেকসই ও ন্যায্য খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা তরুণদের শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান দিচ্ছি না, বরং তাদেরকে পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকেই ভবিষ্যতের খাদ্য ব্যবস্থা রক্ষার দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে।’’
আয়োজক সহযোগী সংগঠন ইয়ুথ চেঞ্জ সোসাইটি বাংলাদেশ-এর মাঠ পর্যায় প্রধান (হেড অব ফিল্ড) তাহসিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘ফুড সিস্টেম বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা মানে শুধু কৃষি কাজ নয়, এটি মানুষের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিবেশের সাথে জড়িত একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। আমরা তরুণরা যদি এখন থেকেই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, জৈব কৃষি এবং টেকসই কৃষি নিয়ে কাজ শুরু করি, তবে ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ ও সচেতন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। এই প্রশিক্ষণ তরুণদের শিখিয়েছে কীভাবে কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্ভাবনী প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।’’
আয়োজক সংগঠন প্রভাতী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক বলেন, ‘‘গেইন এবং ওয়াইসিএসবিডি-এর সাথে যৌথ সহযোগিতায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন। খাদ্যে ভেজাল, অপচয় আর অবহেলাকে বাদ দিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে নিরাপদ ও ন্যায্য খাদ্য ব্যবস্থার পক্ষে। আসুন আমরা সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিরাপদ ও ন্যায্য খাদ্য ব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত সূচনা করি।’’
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া লোক-প্রশাসন বিভাগের ১৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ সোহান বলেন, ‘‘এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির বিষয়গুলো গভীরভাবে জানতে পেরেছি। কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বরং কীভাবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজেদের আওয়াজ পৌঁছে দেওয়া যায় এবং সমাজে টেকসই পরিবর্তন আনা যায়, সে বিষয়েও স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছি। অর্জিত এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমরা তরুণরাই নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারব।’’
প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীরা খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেন। আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন, এই প্রশিক্ষণ তরুণদের নীতিনির্ধারণ ও সামাজিক পরিবর্তনে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে অনুপ্রাণিত করবে।
এফকে/ নিলয় সরকার