বাংলাদেশ সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ কাউন্সিল (বিএসএসসিআর) ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যৌথ আয়োজনে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘সায়েন্স, স্পিরিচুয়ালিটি অ্যান্ড স্যাংকটিটি’ বিষয়ক শীর্ষক কনফারেন্স।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১০টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়াম রুমে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী ও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আয়েশা আক্তারের সঞ্চালনায় কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাসুদা কামাল ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলাইমান, বিএসএসসিআরের সভাপতি প্রফেসর ড. নাজমা খান মজলিশ। বিএসএসসিআরের ৪র্থ কনফারেন্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. শাহনাজ হুসনে জাহান, এবং কো-চেয়ার হিসেবে আছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন।
বিএসএসসিআরের সভাপতি প্রফেসর ড. নাজমা খান মজলিশ বলেন, ‘ এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে সকল ধর্ম ও সংস্কৃতির পঠন-পাঠন এবং আন্তঃধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়া ও আগ্রহ সৃষ্টি করা। পৃথিবীর প্রায় সকল প্রতিষ্ঠিত ধর্মসমূহ, সংস্কৃতি মানুষের ন্যায়নিষ্ঠতা, মানবিক অধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আন্তঃধর্মের মধ্যে সহাবস্থানের সোপান এবং ইনক্লুসিভনেস-এর কথা বলে বলে আমার বিশ্বাস। আমরাও সেই কাজটাই করি৷’
বিশেষ অতিথি ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘কেবল ডিগ্রিলাভই আমাদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।গবেষণার সফলতা তার প্রকাশের সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার বাস্তব প্রয়োগের উপর নির্ভর করে। গবেষণার ফল যেন কেবল গ্রন্থাগারের তাকে বন্দি না হয়ে থাকে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাসুদা কামাল বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্রতা’ যা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান সৃষ্টির বিষয়। গবেষণায় যখন এই তিনটি বিষয় একসাথে কাজ করে, তখন মানবতা কেবল প্রযুক্তিতে নয়, বরং শান্তি, জ্ঞান এবং সততার ক্ষেত্রেও এগিয়ে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা শিখার এবং বুঝার জন্য এবং জাতির জন্য কাজ করার এরকম কনফারেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হায়দার আলী বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের গবেষকদের আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানাচ্ছি। কয়েক মাস আগেও এখানে আরেকটি সম্মেলন হয়েছিল, এবং আপনাদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই ধরনের আয়োজন আমাদের একাডেমিক গুণগত মান এবং গবেষণার মানকে উন্নত করবে। এটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বিরল সুযোগ।’
কনফারেন্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুসনে জাহান বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও পবিত্রতা’ শীর্ষক চতুর্থ বিএসএসসিআর আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য কুমিল্লাকে আমরা হলো সঠিক স্থান বলে মনে করেছি। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত কুমিল্লা শত শত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান দ্বারা চিহ্নিত। এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ নেপাল, ভারত, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রায় ৩০০ জন গবেষক অংশ নিচ্ছেন। আমাদের কাছ ১৭০ টি পেপার জমা পড়েছে, যার ৫০ শতাংশই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।”
কনফারেন্সের কো-চেয়ার হিসেবে আছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পাঁচটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলেই এই সম্মেলনটি আয়োজন করেছে। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তারা এই সাহস দেখিয়েছেন, আর আমরা এটা সম্পূর্ণ করতেছি। আগত অতিথিদের সাথে আগামী দুই দিন আমাদের ভলেন্টিয়াররা তাকবেন৷ আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা আছি।’
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে গবেষক ও অতিথিদের জন্য ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া ও লাটিখোলা মুড়া পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রি-কনফারেন্স ট্যুরের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় বিএসএসসিআর নির্বাহী কমিটির সভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং প্রি-প্রেসকনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
ফরহাদ কাউছার