MCJ NEWS

১২৬ বছরের ঐতিহ্যে দীপ্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ

রানীর দিঘীর শান্ত জলের মতোই স্থির এবং কাঁঠালতলার আড্ডার মতোই চঞ্চল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। যা বয়ে বেড়াচ্ছে হাজারো ইতিহাস । সময়ের স্রোতে পাল্টে গেছে শহর, পাল্টেছে প্রজন্ম কিন্তু অপরিবর্তিত থেকেছে এই প্রতিষ্ঠানের গৌরব, ঐতিহ্য আর শিক্ষার আলো ছড়ানোর প্রতিশ্রুতি। এক শতাব্দী পেরিয়ে আরেক শতাব্দীর পথে দাঁড়িয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজ শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি স্বপ্ন, সংগ্রাম ও তারুণ্যে ভালোবাসার প্রতীক। যাকে ঘিরে অসংখ্য শিক্ষার্থী খুঁজে পায় তাদের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। ২৪শে নভেম্বর ১২৬ বছরে পা রেখেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

তৎকালীন জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় এর উদ্যোগে ১৮৮৬ সালে ‘রায় এন্ট্রাস স্কুল’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৮ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক চিহ্ন স্বরুপ এর নাম পরিবর্তন করে ভিক্টোরিয়া স্কুল নামকরণ করা হয়। বর্তমানে স্কুলটির নাম ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল। স্কুলটির সাফল্য ও পূর্ব ভারতে ক্রমবর্ধমান উচ্চ শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ১৮৯৯ সালে জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।

কুমিল্লা কান্দিরপাড়ের কেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া কলেজটি দ্যুতি ছড়াচ্ছে ব্রিটিশ আমল থেকে। এই কলেজ থেকে বেরিয়েছেন নামী রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, লেখক ও সাংবাদিক।

১৯২১–১৯২৩ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় অবস্থানকালে ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনের রানীর দিঘীর পশ্চিম পাড়ই ছিল তাঁর আড্ডার জায়গা। কলেজ ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর বন্ধন। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই প্রাঙ্গণেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী শচীন দেববর্মন, ভাষা আন্দোলনের নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং জাতীয় পতাকার রূপকার শিবনারায়ণ দাস ছিলেন এই কলেজের শিক্ষার্থী। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আগমন আর গুণী ছাত্রদের পদচারণা ভিক্টোরিয়া কলেজকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা ও বিশেষত্ব।

কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের কাছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই ঐতিহ্যবাহী কলেজ একটি স্বপ্নের ঠিকানা। হাজারো ছাত্রছাত্রী এখানে পড়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসে। ভিক্টোরিয়া কলেজ নিয়ে নিজের স্মৃতি তুলে ধরেছেন সাবেক শিক্ষার্থী তাসনুভা ফাইরোজ আইমান। তিনি বলেন, “১৮ বছরের দুরন্তপনার দিনগুলোতে আমাদের প্রিয়তম জায়গা ছিলো কলেজের কাঁঠালতলা। যাকে আমরা ভিক্টোরিয়া পার্ক বলতাম। ক্লাসের ফাঁকে, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বা বাড়ি ফেরার আগে সবসময়ই সেখানে যেতাম। ইট-সিমেন্টের বেঞ্চে সিগারেটের ছাই, সিঙ্গারার টুকরো কিংবা জন্মদিনের কেকের ক্রিম যা-ই থাকুক না কেন, বন্ধুদের সঙ্গে ঝেড়ে-মুছে বসে পড়তাম। কাঁঠাল পাতার ফাঁক দিয়ে আসা কাঁঠালি রোদ আর চারপাশের সব গন্ধকে ভুলিয়ে দিতো আমাদের উচ্ছ্বাসমাখা আড্ডা।”

ভিক্টোরিয়া কলেজ সম্পর্কে তিতাশ চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রাচীনত্বের বিচারে এই কলেজটি বুড়োদের দলেই পড়ে’। মূলত কলেজটিই ছিল এই অঞ্চলের অন্ধকার যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। সারা বিশ্বেই এই কলেজের শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই অঞ্চলের বাতিঘর ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষিত নাগরিকের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করছে। বলা হয়ে থাকে, ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’। কীর্তিমানদের অবদানে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে বিদ্যাপীঠটি।

/কাজী ফাহমিদা কানন

শেয়ার করুন -