গল্পের শক্তি মানুষকে ভাবায়, অনুভূতিগুলোকে শব্দে বাঁধতে শেখায়। সেই শক্তিকে হৃদয়ে ধারণ করেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেছেন নতুন এক অভিযাত্রায়। তাদের লেখা গল্পগুলো এবার জায়গা করে নিয়েছে কথাসাহিত্য বিষয়ক ছোটোকাগজ ‘কথাশিল্প’-এর প্রথম সংখ্যায়, যা শুধু একটি সংকলন নয়, বরং তাদের সাহিত্যযাত্রার প্রথম সোপান।
স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত এই সংকলনটির সম্পাদনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শীলা। তার অনুপ্রেরণায় শিক্ষার্থীরা গল্প লেখার প্রতি আগ্রহী হন এবং সেই আগ্রহই শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় একটি পূর্ণাঙ্গ সংকলনে। ‘বাংলা ছোটগল্প’ কোর্সের ক্লাসে গল্প লেখার অনুশীলন থেকেই এই উদ্যোগের সূচনা হয়। শিক্ষার্থীরা একে একে তাদের গল্প জমা দিতে শুরু করেন, আর সেখান থেকেই গড়ে ওঠে ‘কথাশিল্প’-এর ভিত্তি। শেষ পর্যন্ত ৪৬ জন শিক্ষার্থীর লেখা সংকলিত হয়েছে এই গ্রন্থে, যা তাদের সৃজনশীলতা ও অনুভূতির প্রতিচিত্র বহন করছে।
১৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাডমিন্টন কোর্টে কথাসাহিত্য বিষয়ক ছোটোকাগজ ‘কথাশিল্প’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শীলা, সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, প্রভাষক মো. গোলাম মাহমুদ পাভেল এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা।
এই সংকলনের গল্পগুলো শুধু সাহিত্যচর্চারই প্রতিফলন নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও কল্পনার সংমিশ্রণ। অনেকের জন্যই এটি ছিল গল্প লেখার প্রথম অভিজ্ঞতা। নতুন লেখকদের জন্য এটি এক অনন্য সুযোগ, যেখানে তারা নিজেদের চিন্তাভাবনাকে শব্দে রূপ দিতে পেরেছেন।
সংকলনে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সুবর্ণা মোস্তফা বললেন, ‘গল্প লেখার জগতে আমার প্রবেশ ছিল নতুন। কিন্তু এই সংকলনের মাধ্যমে আমার প্রথম লেখাগুলো প্রকাশিত হলো, যা আমার জন্য দারুণ অনুপ্রেরণার।’
তেমনই আরেক শিক্ষার্থী মো. তাওহীদ হোসেন সানি, যিনি আগে কখনো গল্প লেখেননি, বললেন, ‘শীলা ম্যামের অনুপ্রেরণা ছাড়া আমরা গল্প লেখা শুরু করতাম না। এখন যখন দেখি আমাদের লেখা মলাটবদ্ধ হয়েছে, তখন এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।’
এই সংকলনকে শিক্ষার্থীদের সাহিত্যচর্চার এক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন ড. কামরুন নাহার শীলা। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই এটি প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল, নানা কারণে দেরি হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করতে পেরে সত্যিই আনন্দ লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতেও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখবে এবং নতুন নতুন গল্প লেখার মাধ্যমে নিজেদের লেখকসত্তাকে বিকশিত করবে।’
‘কথাশিল্প’ কুবির বাংলা বিভাগের গণ্ডি ছাড়িয়ে হতে পারে নতুন লেখকদের জন্যও দৃষ্টান্ত। সংকলনটি প্রমাণ করে, একজন লেখকের সাহিত্যযাত্রা শুরু হতে পারে যেকোনো সময়, শুধু প্রয়োজন সঠিক অনুপ্রেরণা আর নিজেকে প্রকাশের ইচ্ছা।
/সাজিদুর রহমান